ত্রিপুরার সরকারী ডাক্তারদের সংগঠনের চিঠিতেই কোভিড-চিকিৎসা অব্যবস্থার কথা !

ত্রিপুরার সরকারী ডাক্তারদের সংগঠনের চিঠিতেই কোভিড-চিকিৎসা অব্যবস্থার কথা !

আইসিইউ বেডের অভাব, রোগীদের রাখার জায়গার অভাব, সঙ্কটাপন্নরোগী মেঝেতে শুয়ে আছেন, পাঁচ-ছয় জন ডাক্তার দিয়ে আড়াইশো-দু’শো আশি জনের চিকিৎসা হচ্ছে, রোগীরা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা পাচ্ছেন না, কোভিড ওয়ার্ডে জরুরী প্রয়োজনে কোনও ওধুধ,ইত্যাদি লাগলে , তা প্রটোকল মেনে কিনতে অনেক সময় লাগছে, ডাক্তারকে রোগীর, রোগীর বাড়ির এবং অনেক প্রভাবশালী ব্যাক্তির ফোন ধরতে হয় সারাদিন , তাতেই প্রচুর সময় লেগে যায়।

সঙ্কটাপন্ন রোগীদের অন্য রোগীদের সাথে এক করে রাখা হয়, তারা প্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন না।

কোনও রোগী বা তার পরিবারের অভিযোগ নয় এগুলি, ত্রিপুরার সরকারী ডাক্তারদের সংগঠন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে লিখিতভাবে  এসব জানিয়েছে বুধবারে।

 

ত্রিপুরার প্রধান চিকিৎসাকেন্দ্র জিবিপি হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ড নিয়ে অভিযোগ বেড়েই যাচ্ছে।

অক্সিজেন না পেয়ে মারা যাওয়া, কভিড ওয়ার্ডে অন্য রোগের চিকিৎসা না পাওয়া, মারা  গেলেও অনেক সময়ধরে  পরিবারকে খবর না দেয়া, এমনসব মারাত্মক অভিযোগ একের পর এক। মাসখানেকে সময়ে হু হু করে বেড়েছে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা। এগারো বছরের বাচ্চা থেকে সত্তর পার হওয়া মানুষ, তালিকায় আছেন সব বয়সেরই। ত্রিপুরাই উত্তরপূর্বাঞ্চলে কোভিড মৃত্যু-হারে সবার আগে।

তিনদিনের শিশুর মৃত্যু, পুলিশে গেছেন মা-বাবা।

গোমতী জেলা হাসপাতালের হুইল চেয়ারে বসে চিকিৎসার অপেক্ষায় মারা গেছেন এক প্রাক্তন সেনা সদস্য।

কোভিড জুজুতে হাসপাতালে এসেও গর্ভবতী মা-কে সন্তানের জন্ম দিতে হয়েছে খোলা জায়গায়। অ্যাম্বুলেন্সে সন্তানের জন্ম দিয়ে , সন্তান কোলে বাবা, মা শুয়ে অ্যাম্বুলেন্সেই , নাড়ি কেটে দু’জনকে ভর্তি করানোর জন্য দীর্ঘ  অপেক্ষায়, হাসপাতালের উঠানে,  জিবিপি হাসপাতালেই।

হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসায় ভয় পেয়ে যাচ্ছেন অনেকেই।

সারা রাজ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। কোভিড পজিটিভিটির হার উঠছে আর উঠছেই।

পরিস্থিতি বেশ জটিল।

 

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী জিবিপি হাসপাতালে বুধবারে গিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা অনেকগুলি দফতরের একটা স্বাস্থ্য বিভাগও। ডাক্তার এবং অন্যান্যদের সাথে মিটিঙ করেছেন।

সেখানেই সরকারী ডাক্তারদের সংগঠন, এটিজিডিএ সরকার প্রধানের হাতে  একটি লম্বা চিঠি দিয়েছে।

আইসিইউ বেডের অভাব, রোগীদের রাখার জায়গার অভাব, সঙ্কটাপন্নরোগী মেঝেতে শুয়ে আছেন, পাঁচ-ছয় জন ডাক্তার দিয়ে আড়াইশো-দু’শো আশি জনের চিকিৎসা হচ্ছে, রোগীরা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা পাচ্ছেন না, কোভিড ওয়ার্ডে জরুরী প্রয়োজনে কোনও ওধুধ,ইত্যাদি লাগলে , তা প্রটোকল মেনে কিনতে অনেক সময় লাগছে, ডাক্তারকে রোগীর, রোগীর বাড়ির এবং অনেক প্রভাবশালী ব্যাক্তির ফোন ধরতে হয় সারাদিন , তাতেই প্রচুর সময় লেগে যায়, লিখছে এটিজিডিএ।

 

সঙ্কটাপন্ন রোগীদের অন্য রোগীদের একসাথে রাখা হয়, তারা প্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন না।

এটিজিডিএ কিছু পরামর্শও দিয়েছে।

ভর্তির সময়, কার কীরকম অবস্থা ও  বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের প্রয়োজন, সেইমত ভাগ করে নিতে হবে। প্রত্যেক লক্ষণযুক্ত রোগীকে দিনে দুইবার দেখতে হবে, এবং গুরুতরদের আরও বেশিবার দেখতে হবে। ডাক্তারের সংখ্যা এবং রোগীদের জন্য জায়গা বাড়াতে হবে। আইসিইউ বেড বাড়িয়ে, সেসব জায়গায় কাজের অভিজ্ঞতা আছে , এমন ডাক্তার দিতে হবে। নোডাল অফিসার রোগীর পরিবারকে তার অবস্থা জানাবেন। প্রফেসররা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের চিকিৎসা নজরে রাখবেন। তারা রোগীর সাথে ভিডিও কলে কথা বলবেন। প্রশাসনের একজনকে রোগীর বাড়ির সাথে যোগাযোগের জন্য রাখার কথা বলা হয়েছে, রোগীর পরিবার এখন কোনও খবর পায় না।

তারা পাঁচ-ছটা ল্যান্ডফোন দিয়ে  একটি কল সেন্টার ২৪ ঘন্টা চালাতেও বলেছেন, সেখান থেকে রোগীর পরিবার খবর পাবেন।

 

 

কয়েকদিন আগে সব কোভিড কেয়ার সেন্টারে কল সেন্টার চালুর কথা ঘোষণা হয়েছিল, জিবিপি হাসপাতালের জন্য নম্বরই দিয়ে দেয়া হয়েছিল। সেটি বন্ধ হয়ে গেছে কিনা, এটিজিডিএ’র কারও সাথে যোগাযোগা করা যায়নি বলে জানা যায়নি। বলাই বাহুল্য স্বাস্থ্য দফতরের কোনও কর্তাকে পাওয়া যায় না, জিবিপি হাসপাতালের সুপারকে তো নয়ই ।

ত্রিপুরাকে একসময় কোভিডমুক্ত ঘোষনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষনার পরেও অনেকটা সময় প্রায় নিরুপদ্রবে কেটেছে ত্রিপুরায়। প্রস্তুতির সময় অনেকটাই পাওয়া গেছে। এক সময় প্যারামিলিটারি ফোর্সের অনেক সদস্য আক্রান্ত হলেও , সেটি সাধারণ নাগরিকের মধ্যে ছড়ায়নি।

অন্য রাজ্যে আটকে থাকা মানুষ যখন ফিরতে শুরু করেন, তখন তাদের প্রত্যেকের স্যাম্পেল যেমন নেয়া হয়নি, আবার স্যাম্পেল নেয়ার পর , ফলাফল জানার আগেই বাড়িতে যেতে দেয়া হয়েছে। নিজেদের মত করে বড়ি গেছেন, পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করেছেন। তখন ৫ঃ১ অনুপাতে পরীক্ষা শুরু হয়। সে সময় থেকে সাধারণ নাগরিকের মধ্যে আক্রান্ত ধরা পড়তে শুরু করে বেশি সংখ্যায়।  বেগতিক দেখে সবারই  পরীক্ষা করার  নির্দেশ হয়, তবে ততদিনে অনেক ছড়িয়ে গেছে।

বাইরে থেকে যারা আসছিলেন, তাদের প্রত্যেকের পরীক্ষা করা এবং পরীক্ষার ফল আসা পর্যন্ত ফ্যাসিলিটি কোয়ারান্টিনে রাখা, এই পরামর্শ সংবাদ মাধ্যম, সমাজিক মাধ্যমে দেয়া হয়েছে, পাত্তা পায়নি।

একটি হাসপাতালকে শুধু কোভিডের কাজে ব্যবহারের কথায়ও  একবার আইনমন্ত্রী আগের সরকারের কথা টেনে ছিলেন, অবশ্য এখন যে বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় এবং ছোট, মাঝারি কোভিড কেয়ার সেন্টার চলছে, অথবা হাসপাতাল যা আছে, তার কোনওটাই এই সরকারকে করতে হয়নি, তৈরি বাড়িতে সেন্টার চালু করা গেছে। এখন জিবিপি হাসপাতাল থেকে নানা রকম বিভাগ অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

 

সরকারে দলের পরিবর্তনে এটিজিডিএ’র পরিচালনাও বদল এসেছে। আগের জমানায় যারা পরিচালনায় ছিলেন, তাদের অধিকাংশই সরকারপন্থী বলে মানুষ মনে করতেন, এখনও তাই।

এই সংগঠন আগেও কোভিডের জন্য একেবারে আলাদা হাসপাতালের কথা বলেছে। নিজেদের সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত কীটের দাবি জানিয়েছে। নিজেরা অসুস্থ হলে আলাদা রুম দাবি করেছে। নতুন ডাক্তার-নার্স নিয়োগের দাবি আগেও করেছে, বুধবারের চিঠিতেও ‘ম্যানপাওয়ার’ বাড়ানোর কথা আছে।  এমনকী সাতদিনের ডিউটি শেষে কোয়ারান্টিনে থাকার সময় ভাল খাবারের দাবি করতে হয়েছে তাদের।

 

COMMENTS