‘এক গুড়িয়া কা জনম ঔর এক ডাক্তার কি মউত”

‘এক গুড়িয়া কা জনম ঔর এক ডাক্তার কি মউত”

আজ দুর্গার জন্মদিন । কে এই দুর্গা । দুর্গা বা কানুপ্রিয়া আগরওয়াল ভারতের প্রথম টেস্ট টিউব বেবি । এই স্বীকৃতি পাওয়া কিন্তু সহজ ছিল না । যে ডাক্তারের হাত ধরে দুর্গার জন্ম সেই সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করতে হয়েছিল , স্বীকৃতি না পাওয়ার যন্ত্রনায় । আজ দুর্গার বয়স ৪২।


সুভাষ মুখোপাধ্যাযের জন্ম , ১৬ জানুয়ারি ১৯৩১ সালে । ১৯৮১ এর ১৯ জুন আত্মহত্যা করেছিলেন । হাজারীবাগে তাঁর জন্ম । শারীরবিদ্যায় বি এস সি পাশ করে এম বি বি এস ডিগ্রি নেন । দু দুবার পি এইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন । তাঁর পরিচয় ছিল চিকিৎসক গবেষক । অধ্যাপনা করতেন নীল রতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে শারীরবিদ্যা বিভাগে । তিনি  ভারতের  প্রথম এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় টেস্ট টিউব বেবি দুর্গার সৃষ্টিকর্তা হিসেবে স্বীকৃত। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের কাছে তাঁর গবেষণার ফল জানানোর ক্ষেত্রে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দ্বারা প্রচণ্ড ভাবে বাধাপ্রাপ্ত হন এবং হতাশ হয়ে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে জুন আত্মহত্যা করেন । সুইসাইড নোট লিখেছিলেন , আমি আর প্রতিদিন হার্ট এটাকে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে পারছি না । তাঁর জীবন ও মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তপন সিনহা , ‘এক ডক্টর কি মউত’ নামক হিন্দি সিনেমাটি তৈরি করেছিলেন ।

রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে পি এইচ ডি ডিগ্রি লাভ করার পরেও তিনি ১৯৬০ সালে  ইংল্যান্ড যান এবং ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপক জন লোরেনের সঙ্গে গবেষণা করে লিউটিনাইজিং হরমোনের পরিমাপ নির্ণয়ের এক নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে দ্বিতীয়বার পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।
১৯৭৮ সালের আজকের দিনেই , ৩রা অক্টোবর তিনি ভারতের প্রথম চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী হিসেবে একজন টেস্ট টিউব শিশুর জন্ম দিয়ে ইতিহাস স্থাপন করেন। তিনি এই শিশুর নাম রাখেন দুর্গা । মা বাবা মেয়ের নাম রাখেন কানুপ্রিয়া আগরওয়াল।  ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিক প্যাট্রিক স্টেপটো ও রবার্ট জিওফ্রি এডওয়ার্ডসের তত্ত্বাবধানে  ওল্ডহ্যাম জেনারেল হসপিটালে পৃথিবীর প্রথম নল-জাত শিশু লুইস জন ব্রাউনের জন্ম দেওয়ার ৬৭ দিন পরে সুভাষের গবেষণার মাধ্যমে দুর্গার জন্ম হয়। এই ভারতীয় চিকিৎসকের পদ্ধতি যদিও ছিল একেবারেই অন্যরকম। আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে তার গবেষণার সম্বন্ধে বক্তৃতা দিতে চাইলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে অস্বীকার করে। এই গবেষণার স্বীকৃতি প্রদান না করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্যদপ্তর তার গবেষণার সত্যতা সম্বন্ধেই সন্দেহ প্রকাশ করে ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই নভেম্বর পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সুভাষের সমস্ত গবেষণা মিথ্যা বলে এই কমিটি রায় দেয়। তাঁকে  রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি  প্রতিষ্ঠানের চক্ষু বিভাগে বদলি করা হয়। প্রজনন শারীরবিদ্যা সমন্ধে সমস্ত গবেষণা তাকে বন্ধ করে দিতে হয়।  আমলাতান্ত্রিকতা ও পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসক সমাজ দ্বারা ক্রমাগত বিদ্রুপ ও অপমানে হতাশ হয়ে সুভাষ ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে জুন কলকাতায় নিজের বাসভবনে আত্মহত্যা করেন।


টি. সি. আনন্দ কুমারের গবেষণার ফলে ১৯৮৬ সালের ১৬ই আগস্ট হর্ষবর্ধন রেড্ডি বুরি জন্মগ্রহণ করলে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম টেস্ট টিউব বেবি বলে গণ্য করা হয়। ১৯৯৭ সালে আনন্দ কুমার কলকাতায় অনুষ্ঠিত একটি বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে যোগ দিতে এলে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের গবেষণা নথিগুলি তার হাতে আসে। এই সমস্ত নথিগুলি যাচাই করে ও দুর্গার মা বাবার সাথে আলোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ই ছিলেন ভারতে প্রথম টেস্ট টিউব বেবির স্রষ্টা। কানুপ্রিয়া আগরওয়ালা বা দুর্গা তার ২৫ তম জন্মদিনে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের এক স্মৃতিসভায় নিজের পরিচয় সর্বসমক্ষে জানিয়ে ঘোষণা করেন যে, সুভাষের গবেষণা মিথ্যে ছিল না। একজন সফল চিকিৎসক বিজ্ঞানীর আত্মহত্যা আজ দুর্গার জন্মদিনে আমাদের অবশ্যই ভাবতে বাধ্য করে রাষ্ট্রের অমানবিক মুখকে ।

COMMENTS