সরকারকে ভর্ৎসনা – কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বদলি বিচারপতি মুরলিধর

সরকারকে ভর্ৎসনা – কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বদলি বিচারপতি মুরলিধর

গতকাল সকালেই সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছিলেন দিল্লী হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরলিধর । কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তাঁকে বদলির নির্দেশ ধরিয়ে দিল কেন্দ্র সরকার।

দিল্লি হাইকোর্টের তৃতীয় প্রবীণতম বিচারপতি তিনি ।

তাঁর নেতৃত্বে গঠিত দিল্লী হাইকোর্টের ডিভিশনাল বেঞ্চে গত কয়েকদিন ধরে চলা দিল্লি হিংসা মামলার শুনানি চলছিল।

তিনি স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছিলেন আরেকটি ১৯৮৪ হতে দেওয়া যায় না।

প্রশাসনকে আরো সজাগ হতে হবে। সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে আর দাঙ্গা না ছড়ায় ।

পুলিশের আরও অনেক হেল্পলাইন চালু করতে হবে। যারা উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখছে তাদের সবার বিরুদ্ধে এফআইআর করতে হবে।

উল্লেখ্য গত ১২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম বিচারপতি মুরলিধরের বদলি নিয়ে সুপারিশ করেছিল। এর ঠিক দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই গতকাল রাতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে তাঁকে বদলির নির্দেশ ধরিয়ে দেয়া হলো।

কেন্দ্রীয় সরকার থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে সংবিধানের ২১১(১) ধারার ক্ষমতা বলে এবং দেশের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা ক্রমে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরলিধরকে পাঞ্জাব -হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলি করেছেন দেশের রাষ্ট্রপতি এবং সেই বিধায় তাঁকে অবিলম্বে পাঞ্জাব হরিয়ানা হাইকোর্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।

যদিও বিজ্ঞপ্তিতে কবের মধ্যে তাঁকে দায়িত্ব নিতে হবে সেই কথা বলা নেই কিন্তু এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি এটাই প্রমাণ করে যে গতকালই দিল্লি হাইকোর্টে তিনি শেষ এজলাসে বসেছিলেন। দিল্লী হাইকোর্টে তিনি তাঁর শেষ শুনানিতে কেন্দ্র সরকারের দাঙ্গা দমনে ব্যর্থতাকে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন এবং একই সাথে প্রশাসনের গৃহীত বিভিন্ন ব্যবস্থা সম্পর্কে যথেষ্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন ।

বিচারপতি মুরলীধর’র বদলি নিয়ে গত সপ্তাহে দিল্লি হাইকোর্টের বার এসোসিয়েশন অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিল ।তারা কলেজিয়াম কে অনুরোধ করেছিল যাতে বদলির নির্দেশ প্রত্যাহার করা হয় ।

দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সরকার, দিল্লি রাজ্য সরকার এবং পুলিশ প্রশাসনের গৃহীত ব্যবস্থা যে যথোপযুক্ত ছিল না তা স্পষ্ট করে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিচারপতি মুরলীধর কে বদলি করে দেওয়ায় বিরোধী দলগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনায় সরব হয়ে উঠেছে।

গতকাল বিচারপতি মুরলীধর এবং অপর বিচারপতি তালওয়ানত সিং এর ডিভিশন বেঞ্চ দিল্লি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিল তাদের সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য কেন বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর, প্রভেশ ভার্মা, অভয় ভার্মা এবং কপিল মিশ্র’র বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখার অপরাধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে না।

১৯৮৪ সালে বিচারপতি মুরলীধর আইনজীবী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন চেন্নাইতে। ১৯৮৭ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট এবং দিল্লি হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন । ২০০৬ সালে তিনি দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান ।

দেশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় দিয়েছেন বিচারপতি মুরলিধর । আদালতের বিচারপতিকে লর্ডশিপ বলার যে প্রথা তিনি তার আদালতে সেই প্রথা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

২০১০ সালে দিল্লি হাইকোর্টের ফুল বেঞ্চ একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সম্পদের হিসাব দেওয়া আর টি আই আই’র অন্তর্ভুক্ত বলে সিদ্ধান্ত জানায় । সেই বেঞ্চের অন্যতম বিচারপতি ছিলেন তিনি ।

২০০৯ সালে নাজ ফাউন্ডেশনের দায়ের করা এক আবেদনের ভিত্তিতে সমকামিতাকে আইনি বিধান দেওয়ার যে যুগান্তকারী রায় দিয়েছিল দিল্লী হাইকোর্ট , তিনি সেই ডিভিশন বেঞ্চের সদস্য ছিলেন।

হাসিমপুরা গণহত্যা মামলার রায় দেন তিনি ।

১৯৮৪ সালের শিখ গণহত্যা মামলার ডিভিশন বেঞ্চ তার নেতৃত্বেই গঠিত হয়েছিল। সেই মামলায় কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমারকে শাস্তি দেওয়া হয়।

COMMENTS