করোনা আক্রান্ত একজন নার্সের সুস্থ্য হয়ে কাজে ফিরে আসার জেদ — রেশমা এখন “উই শ্যাল ওভারকাম’র” লিরিক্স

করোনা আক্রান্ত একজন নার্সের সুস্থ্য হয়ে কাজে ফিরে আসার জেদ — রেশমা এখন “উই শ্যাল ওভারকাম’র” লিরিক্স

“তোমাকে হারিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যেই এই ঘর থেকে বেরিয়ে আসবো” । বেরিয়ে এসেছেন রেশমা। করোনাকে হারিয়ে আইসলেশন ওয়ার্ডের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন তিনি।

কেরালার ৩২ বছরের সরকারি হাসপাতালের নার্স রেশমা মোহনদাস। রেশমা কেরালার প্রথম স্বাস্থ্য কর্মী যিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ভেঙ্গে পড়েন নি । যে হাসপাতালে কাজ করতেন সেখানেই তার চিকিৎসা হয়েছে। রেশমা এখন সম্পুর্ন সুস্থ্য । বাড়ি ফিরে গেছেন। নিয়ম অনুযায়ী চৌদ্দ দিন বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। যখন হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেশমার চিকিৎসা চলছিল , একদিন সহকর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে লিখেছিলেন রেশমা,”I will leave this room within a week after defeating you”— এ যেন এক নতুন শ্লোগান — করোনায় আক্রান্তদের ভেঙ্গে না পড়ার , নিজেকে উদ্বুদ্ধ করার , ‘উই শ্যাল ওভারকাম’ গান ।

রেশমা আবার কাজে ফিরবেন। অপেক্ষায় আছেন কখন শেষ হবে চৌদ্দ দিন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে যেতে চাইছেন নিজের কাজের জগতে। রোগীদের বেডের পাশে। তুলে ধরবেন সেবার ডালি। তিনি জানেন এই কদিনে একজন ‘করোনা সারভাইবর’ তকমা তার গায়ে সেঁটে গেছে। করোনা আক্রান্তদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন প্রেরণার অন্য নাম ।

প্রশ্ন হলো রেশমা করোনায় আক্রান্ত হলেন কিভাবে ? রেশমা কাজ করেন কেরালার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই ভর্তি হয়েছিলেন ৯৩ বছরের থমাস আব্রাহাম আর ওনার স্ত্রী ৮৮ বছরের মারিয়াম্মা। দুজনেই ছিলেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত।ইতালি থেকে ফিরে এসেছিলেন তাদের ছেলে আর পুত্র বধূ। কয়েকদিনের মধ্যেই সবাই করোনায় আক্রান্ত হন।

হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে দায়িত্ব সামলাতেন রেশমা। মার্চ মাসের ১২ তারিখ থেকেই আব্রাহাম আর মারিয়াম্মার দেখভালের দায়িত্ব পড়েছিল রেশমার ওপর। এদের দুজনের কেউই মাস্ক পড়তে পারতেন না। কষ্ট হতো। সারাদিনই তাদের সাথে থাকতেন রেশমা। কথা বলতেন। ওদের মনে সাহস যোগাতেন। ওদের যত্নের কোনও ত্রুটি রাখেন নি। রেশমার কথায় , এই দুজন তো আমার মা – বাবার মতোই।

মার্চের ২৩ তারিখ শরীর একটু খারাপ হয় রেশমার। অভিজ্ঞ রেশমা বুঝতে দেরি করেন নি । নিজের সিনিয়রকে জানিয়ে দিলেন। সময় নষ্ট না করে রেশমাকে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়।ইতিমধ্যে টেস্ট পজিটিভ এসে গেছে। রেশমার সাথে যারা কাজ করতেন , সবাইকে বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ।

রেশমার সেই বিশেষ দুজন রোগী আব্রাহাম আর মারিয়াম্মাও কিন্তু সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন । সারা দেশের করোনা চিকিৎসায় এই ঘটনা সবার নজর কেড়ে নিয়েছে।

ষাট বছরের ওপরে , করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত যেকোন রোগীই হাই রিস্ক গ্রূপে থাকেন। আশি বছরের ওপরের এই দুজন রোগী কিন্তু সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন । স্বভাবতই রেশমা খুশী। রেশমা তো বলেই দিয়েছেন , করোনা চিকিৎসায় সারা দেশকে পথ দেখাবে কেরালা ।

COMMENTS