প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও বৈঠকে কথা বলার সুযোগ ছিল না মমতার। অনুপস্থিত কেরালার মুখ্যমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও বৈঠকে কথা বলার সুযোগ ছিল না মমতার। অনুপস্থিত কেরালার মুখ্যমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ ভিডিও কনফারেন্সিং’র মাধ্যমে দেশের সব মুখ্যন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করেন । এই বৈঠকে মৌখিক ভাবে বক্তব্য রাখার সুযোগ ছিল না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির । কেরালার জন্যও আলোচনা করার সময় বরাদ্দ ছিল না । কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এই বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন । কেরালার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন রাজ্যের মুখ্য সচিব।

বৈঠক প্রায় তিন ঘন্টা ধরে চলে। বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আজকের বৈঠকে আলোচনা হয়। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল লকডাউনের সময়সীমা আর বাড়ানো হবে কিনা ।

জানা গেছে চারজন মুখ্যমন্ত্রী লকডাউন ৩রা মে’র পরেও বাড়ানোর জন্য জোর সওয়াল করেছেন ।

বিভিন্ন মহলেই খবর রটে গিয়েছিল যে মমতা ব্যানার্জি কথা বলার সুযোগ না থাকায় সম্ভবত আজ ভিডিও বৈঠকে অনুপস্থিত থাকবেন । যদিও শেষ পর্যন্ত উপস্থিত হন মমতা । উপস্থিত হন নি কেরালার মুখ্যমন্ত্রী । এর আগের বৈঠকে যে সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা বক্তব্য পেশ করেছিলেন তারা আজ মৌখিক বক্তব্য রাখার জন্য বিবেচিত হন নি । কথা বলার সুযোগ না থাকলেও ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা তাদের বক্তব্য এবং পরামর্শ কেন্দ্রের কাছে লিখিত আকারে পাঠাতে পারবেন ।

আজকের বৈঠকে নয়জন মুখ্যমন্ত্রী তাদের বক্তব্য রাখেন । কে কী বললেন বৈঠকে ?

মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা জানান তার রাজ্যে কেন্দ্রীয় নির্দেশ সঠিক ভাবে পালন করা হচ্ছে । লক ডাউন মানার ক্ষেত্রে কোনও ধরণের শিথিলতা নেই । কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত যাই আসুক , সেই অনুযায়ী কাজ করতে মিজোরাম বদ্ধপরিকর ।

মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা বলেন ৩রা মে’র পরেও তার রাজ্যে লকডাউন জারি রাখা হবে । আন্তঃ রাজ্য এবং আন্তঃ জেলা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে । চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে এবং অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার ক্ষেত্রে শিথিলতা নিয়ম মেনে অনুসরণ করা হবে ।

পুডুচেরির মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী পিপিই এবং অন্যান্য চিকিৎসা বিষয়ক যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় অনুদান বাড়ানোর দাবি করেন। তার রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা পুনরুদ্ধারে কেন্দ্রীয় সাহায্য দ্রুত দেওয়ার দাবি জানান ।

উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং কয়েক দফায় ব্যবসা এবং বানিজ্যিক কাজ শুরুর পক্ষে সওয়াল করেন।

হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জয় রাম ঠাকুর জানান তার রাজ্যে ইতিমধ্যেই প্রচুর সংখ্যক কোভিড উনিশ পরীক্ষা করা হয়েছে। রাজ্যের বারটি জেলায় কোনও পজিটিভ রোগী পাওয়া যায় নি। হিমাচল প্রদেশ বিভিন্ন ধরণের অর্থনৈতিক কাজকর্ম শুরু করতে প্রস্তুত বলে তিনি জানান ।

ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন নবীন পট্টনায়েক আরো একমাস লকডাউন জারি রাখার পক্ষে সওয়াল করেন। একগুচ্ছ প্রস্তাব রাখেন তিনি। তার মতে সংক্রমণজনিত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত লকডাউন সম্পূর্ণ তুলে তুলে দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই । মানুষের একসাথে জড়ো হওয়া , বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান , ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। স্কুল ,কলেজ , বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগামী কয়েক মাস পর্যন্ত বন্ধ রাখার পক্ষে তিনি যুক্তি দেখান।

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার জানান যে তার রাজ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্ক্রিনিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে । অনেকটা পোলিও নির্মুলিকরণ কর্মসূচির মত কাজ চলছে বলে তিনি জানান। এখন পর্যন্ত বিহারে প্রায় চার কোটি মানুষকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। বিহারের যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিক অন্য রাজ্যে আটকে আছেন তাদের এক হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হচ্ছে বলেও নীতিশ কুমার জানান।

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি জানান এপ্রিলের ১৭ তারিখ পর্যন্ত তার রাজ্যে ২২০০০ পরীক্ষা করা হয়েছে এবং গত ১০ দিনে ২৮০০০ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে ।বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরীক্ষার কাজও শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান। গুজরাটে এখন পর্যন্ত যতজন কোভিড উনিশে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এদের মধ্যে ৮৫%ই অন্য কোনো না কোনো রোগে ভুগছিলেন । রাজ্যে গ্রামীণ এলাকাগুলিতে ব্যবসা এবং অর্থনৈতিক কাজকর্ম স্বাভাবিক ভাবেই চলছে বলে তিনি জানান। কেন্দ্র সরকার যদি লক ডাউনের সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহলে তার রাজ্যে সঠিক ভাবেই অনুসরণ করা হবে বলে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।

হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার জানান কনটেইনমেন্ট এলাকা গুলো বাদ দিয়ে বাকি সব এলাকায় স্বাভাবিকভাবেই অর্থনৈতিক কাজকর্ম শুরু হয়ে গেছে । সব ধরনের নিয়ম বিধি মেনে কৃষিক্ষেত্রে কাজকর্ম স্বাভাবিক অবস্থায় চলছে বলেও তিনি জানান ।আপাতত আন্তঃরাজ্য এবং আন্তঃজেলা চলাচলের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি আছে এবং আগামী আরো বেশ কয়েকটি দিন এই বিধিনিষেধ জারি রাখার পক্ষে তিনি মতামত রাখেন।

COMMENTS