১৯ মে

১৯ মেশহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে কারফিউ ভেঙেই শিলচরে মিছিল, ২০ মে,১৯৬১। ছবিঃউইকিপিডিয়া

সেদিন হরতাল । হরতাল শোষণের বিরুদ্ধেই। হরতাল অধিকার আদায়ের জন্যই। মাতৃভাষার অধিকারের দাবি।

আসামের শিলচর শহরের রেল স্টেশনে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছেন। ভোরের ট্রেনের একটি টিকিটও বিক্রি হয়নি। বিকাল চারটার পর শেষ ট্রেনের সময়, সেই সময় পেরিয়ে গেলে রেল ট্র্যাক থেকে মানুষও উঠে যাবেন। দুপুর পর্যন্ত তেমন কোনও গন্ডগোলের খবর নেই।

দুপুর আড়াইটার পর নিরাপত্তা বাহিনীর বন্দুক থেকে গুলি চলল। সেদিনই মারা গেলেন নয়জন। আরও দু’জন পরে।

আসাম সরকার ১৯৬০ সালের অক্টোবর মাসে অসমীয়া ভাষা একমাত্র সরকারি ভাষা বলে সবার উপর চাপিয়ে দেয়। তখন আসামের মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ চালিহা।

আসামের বরাকে তার বিরোধিতায় আন্দোলন গড়ে ওঠে। ১৯৬১ সালের মে মাসের প্রথম দিকে আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দেন ১৩ মে’র মধ্যে এই আদেশ ফিরিয়ে না নিলে, ১৯ মে সাধারণ ধর্মঘট হবে। ১২ মে বরাক উপত্যকায় সেনা ও আধা সেনা ফ্ল্যাগ মার্চ করে।

 

১৯ মে ধর্মঘট শুরু হয় বাংলা ভষার জন্য। বিভিন্ন জায়গায় গণঅবস্থান, জমায়েত হয়। শিলচর রেল স্টেশনেও পিকেটিং হয়। শান্তিপূর্ণ অবস্থানেই গুলি চালায় সরকারি বাহিনী। তার আগে রাইফেলের বাট দিয়ে ব্যাপক মারপিট । তাতে প্রচুর আহত হন। ঠিক তারপরেই গুলি শুরু হয়।

আন্দামানে জেল খাটা উল্লাসকর দত্ত তখন শিলচরে থাকেন। তিনি শহিদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

কেন্দ্রে তখন কংগ্রেসের সরকার, রাজ্যেও।

জি বি পন্থের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ১৯৬০ সালে আসাম ঘুরে যান, নানা পক্ষের সাথে মিটিঙও করেন। শিলচর হত্যার পর ‘ক্রকোডাইল টিয়ার’ নামে একটি ব্যাঙ্গচিত্র ব্যাঙ্গ করেছিল শাসককে।

রাজনৈতিক সমাধানের দিকে না গিয়ে গুলিতে আন্দোলন বন্ধ করতে চেয়েছিল শাসক। শেষ পর্যন্ত সেই আদেশ কার্যকর হয়নি। যদিও খেপে খেপে একই চেষ্টা রয়ে গেছে। ২০১৩ সালেও কাছাকাছি একটি আদেশ হয়েছিল, তাও তুলে নিতে হয়েছে পরে।

আসামে ১৯৬১ সালের পরেও ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন মানুষ। ১৯৭২, ১৯৮৫, ১৯৮৬ এবং ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৬ সালে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষার জন্য। ত্রিপুরায় ককবরক ভাষার সরকারি স্বীকৃতিসহ আরও তিনটি দাবি নিয়ে আন্দোলনে এসে প্রাণ দেয়ার ঘটনা আছে।

 

পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি  বাংলা ভাষার জন্যই প্রাণ দিয়েছিলেন মানুষ। সেই দিন এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

ত্রিপুরার প্রাক্তন সংস্কৃতিমন্ত্রী প্রয়াত কবি অনিল সরকার এই দুই দিনকে ধরেছিলেন একসাথে, “একুশ উনিশ মাতৃ ভাষা শহিদবেদীর প্রভা।একুশ আসে লক্ষ প্রাণে উনিশ  গানে গানে।”

 

শিলচরে লকডাউনের গাইডলাইন মেনে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। ত্রিপুরায় ১৯ মে পালনের কোনও খবর এখনও পাওয়া যায়নি। সরকারি স্তরেও কিছু হয়েছে বলে তথ্য, সংস্কৃতি দফতরের কোনও প্রেস রিলিজ নেই খবর লেখা পর্যন্ত।

 

COMMENTS