গণেশ তখন সবে আঠারো, ভারতীয় সেনায় চাকরি নিয়েছিলেন। গণেশ এখন সাতাশ বছরের, মৃত।
ভারত-চীন সীমান্তে লাদাখে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল এলাকায় গালওয়ান উপত্যকায় মারা গেছেন সীমান্ত সংঘর্ষে।
গণেশ রাম কুনজম। ছত্তিশগড়ের কনকর জেলায় তার বাড়ি, গ্রামের নাম, গিধালি।
গণেশ আর পাঁচজনের মতই বিয়ে করে সংসারের স্বপ্ন দেখেছিলেন। প্রেয়সীর জন্য দূর দেশ থেকে ওয়াটসঅ্যাপে হয়ত খুনসুটি করতেন। একদিন হয়ত বাবা হওয়ার খবর পেতেন । বাড়ি এলে হাতে করে নিয়ে আসতেন প্রিয় সন্তানের বায়নার জিনিসটি। কয়েক ঘন্টায় সব শেষ। প্রিয় সন্তানের সৎকার করার অসহ্য দৃশ্য তার পরিবারকে বয়ে যেতে হবে। দেশের জন্য প্রাণ দেয়া গণেশের পরিবারে শূন্যতা। কোনও উপমা, সম্বোধনই এই শূন্যতা ঢেকে দিতে পারে না।
গণেশ রাম কুনজম’র বিয়ে ঠিক ছিল। পরের বার ছুটিতে এলে চারটি হাত এক হত। তেমনি কথা ছিল। কথা রয়ে গেল, গণেশ আর কথা শুনতে পারবেন না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভিষিকা। হিটলারের নৃশংসতা। অ্যাটম বম্ব । বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছেন নিজেদের কোনও ধ্বংসাত্মক ভূমিকা ছাড়াই। লক্ষ লক্ষ সৈনিক বাড়ি থেকে যে বেড়িয়েছিলেন, আর ফিরে আসেননি। গ্রামের পর গ্রাম, শহর মানুষ শূন্য হয়ে পড়েছিল। পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছিল। নারীরা ছিলেন স্বামী, সন্তান, বন্ধু হারিয়ে জীবন্মৃত। কারও বা শরীরে হায়েনার নখ পড়েছিল। কোনও কিছুই যেন মানব সভ্যতায় দাগ কাটে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও ছোট-বড় অসংখ্য যুদ্ধ হয়েছে পৃথিবী জুড়ে। সেই একই ছবি।
কিছু সময় আগে মধ্যপ্রাচ্যে দেখা গিয়েছিল, মানুষের থেকে মানুষ পালিয়ে সভ্যতার ফসল শহর ছেড়ে দৌড়ছেন পাহাড়ের দিকে। না খেয়ে মারা পড়েছেন। শিশু মুখে খাবার দিতে পারেনি তার বাবা-মা। আনন্দ উৎসবে আসা মানুষের দিকে ছূটে এসেছে গুলি। মিসাইলের ওপর শিশুদের দিয়ে লেখানো হচ্ছে………, শিশুর হাতে বন্দুক তুলে দেয়া হচ্ছে, ইন্টারনেটে সেই ছবিও দেখা যায়, কী ভয়ঙ্কর !
সভ্যতার ছবি ? মানুষ সভ্য ?
সন্তানকে পেটে ধরা মা পৃথিবীর সব জায়গায়ই এক, মা-ই। সেই সন্তান মুহুর্তে লাশ হয়ে যান, অথবা কাউকে লাশ করে দেন।লাশ হয়ে যান মা-সন্তান-বাবা।
কত কত গণেশ রাম কুনজম। যুগ যুগ ধরে চলছে এই প্রাণ দেয়া-নেয়ার অধ্যায়। সীমান্ত ছাড়িয়ে দেশে দেশেই গণেশ !
সভ্যতায় বড় বেমানান সাতাশের যুবক, বিয়ে ঠিক হওয়া যুবক কথা রাখতে পারছেন না।
আসুন বার্ণাড শ’র ‘আর্মস এণ্ড দ্য ম্যান’ বার বার, অনেকবার পড়ি।
COMMENTS