ভাতের থালা হাতে শিক্ষকরা রাস্তায় ! এই ছবিও দেখে নিল ত্রিপুরা।তাদেরই কেউ কেউ হাসপাতালে,বুকে লাগানো ইসিজি মেশিন। কেউ এলিয়ে আছেন চেয়ারে,তাও দেখা গেছে।
চাকরির নিশ্চয়তার জন্য তিনদিন ধরে আগরতলায় গণঅবস্থান করছিলেন ১০৩২৩ শিক্ষকরা। ওরিয়েন্ট চৌমোহনীতে।
রাতে একবার পুলিশ এসে তাদের উঠে যাওয়া কথা বলে যায়। সকালে আন্দোলনে থাকা শিক্ষকদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পুলিশ লাইনে। সাথীদের ছেড়ে দেয়ার দাবিতে পশ্চিম আগরতলা থানা ঘেরাও করেন যারা অন্য শিক্ষকরা। অল ত্রিপুরা সরকারী ১০,৩২৩ এডহক পে শিক্ষক কর্মচারী সংগঠন ১৪ তারিখ থেকে ধর্ণায় ছিল।
ত্রিপুরায় হাজার হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে গেছে আদালতের রায়ে। এখন তারা চুক্তিবদ্ধ হিসেবে আছেন। তারাই ১০৩২৩ শিক্ষক বলে পরিচিত। নিয়োগের সংখ্যা ধরে এই নাম, যদিও এখন আর সংখ্যায় এতজন নেই । চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ মার্চ।
সরকার ১৪৪ ধারা জারি করেছে ১৬ মার্চ বিকাল থেকে, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ‘মাস গেদারিং/পাব্লিক মিটিং’ বন্ধ রাখতে। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত নিষেধ।
বেলা ১১ থেকে সিটি সেন্টারের সামনে ‘ আমরা ১০৩২৩’ নামে এই শিক্ষকদেরই আরেকটি সংগঠন গণধর্ণায় বসার কথা ছিল। আগেই তারা ঘোষণা দিয়েছিলেন। পুলিশ তাদেরও তুলে নিয়ে যায়। বন্ধ করে দেয়া হয় শহরের মাঝখান দিয়ে যাওয়া রাস্তাটির একটা অংশ।
থানা ঘেরাও করে শিক্ষকরা তাদের আন্দোলন যেমন চালিয়ে যান, সহযোদ্ধাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিও জানাতে থাকেন। পুলিশ তাদের মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেবার কথা বলেছিল, শিক্ষকরা তা মানেননি। আগের ধর্ণার জায়গায়ও আরও কিছু শিক্ষক আবার ধর্ণা শুরু করেছেন।
বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আইজিএম হাসপাতালের নেয়া হয়েছে। অল ত্রিপুরা সরকারী ১০,৩২৩ এডহক পে শিক্ষক কর্মচারী সংগঠন’র সভাপতি বিমল সাহাও আছেন। আছেন ‘আমরা ১০৩২৩’-র দীনেশ দেববর্মা। আছেন অন্যরা।
তাদের চাকরি আগের বামফ্রন্ট সরকারের সময় হয়েছিল তিন ধাপে। বাম আমলেই আদালতের রায়ে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন।
বাম সরকারের শেষ দিকে ১২ হাজার অ-শিক্ষক পদে ইন্টারভিউ নেয়া হয়েছিল। এই শিক্ষকরাও সেটি দিয়েছিলেন। সেসব পদে নিয়োগ দেবার আগেই আদালতে যান জনৈক ব্যাক্তি ‘ আদালত অবমাননা’র অভিযোগ নিয়ে। সুপ্রিম কোর্ট নিয়োগ বন্ধ করে দেয়। যদিও আদালতে পরে অবমাননার অভিযোগ টেঁকেনি। ওই পদের ওপর থেকে নিষেধও উঠে গেছে। তবে রাজ্য সরকার এখন বলছে, সেসব পদ লুপ্ত হয়ে গেছে।
শিক্ষকদের দাবি, তাদের চাকরির স্থায়ী সমাধান। তারা শিক্ষকপদে থাকতে চান । চাকরির নিশ্চয়তার জন্য দু/তিন রকমের সমাধানও তারা প্রস্তাব করেছেন। নিষেধ উঠে যাওয়া ১২ হাজার পদেও নিয়োগ দিলে তারা রাজি আছেন ।
শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলে রেখেছেন, তবে এখনও তার কোনও ঘোষনা নেই।
আন্দোলনে থাকা শিক্ষকরা বলছেন , বিজেপি সরকারে আসার আগে তাদের নির্বাচনী ‘ ভিসন ডকুমেন্ট’-এ তাদের চাকরি ঠিক রাখার আশ্বাস দিয়েছিল। সেই কথা যেন রাখা হয়।
এই শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, তাদের আন্দোলন আটকাতেই আসলে ১৪৪ ধারা দেয়া হয়েছে করোনা ভাইরাসের নাম করে। তবে নাসিক, নাগপুর, এমন কয়েকটি জায়গায় একই কারণে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে গত কুড়ি ঘন্টায়। মুম্বাইয়ে গ্রুপ-ট্যুর আপাতত বন্ধ।
কূট-কাচালি যেমনই থাকুক, শিক্ষকদের চোখে জল , এই ফুটেজ পেশাদার ক্যামেরাপার্সনকেও বিচলিত করে !
COMMENTS