লকডাউন সময়েই ৩২ আদিবাসী পরিবারের আশ্রয় গুড়িয়ে দেয়া হল


লকডাউন চলছে দেশজুড়ে,  তার মাঝেই বেঘর হলেন ৩২ আদিবাসী পরিবার,ওড়িশার কালাহান্ডি চেলায়। অন্তত নব্বই জন এখন তীব্র সমস্যার মুখে।
তারা অভিযোগ করেছেন,  ২৪ এপ্রিল পাশের গ্রামে একজনের শেষকৃত্যে গিয়েছিলেন তারা, এসে দেখেন তাদের বাড়িঘর মাটিতে মিশে গেছে। কখন বন বিভাগের কর্মীরা এলেন, কখন তাদের ঘর মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হল, তারা জানেন না। তারা আরও অভিযোগ করেছেন, তাদের ছাগল, মুর্গি, এবং অন্যান্য জিনিস পাচ্ছেন না।

সাগদা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নেহলা গ্রামের বাসিন্দা তারা।

সাগদা গ্রামটি খান্দুল মালি বনের লাগোয়া। এখানে বক্সাইট খনি প্রচুর পরিমাণে আছে।লোক শক্তি অভিযান নামে সংস্থার প্রধান প্রফুল্ল সামন্তারা  বিষয়টি নিয়ে চিঠি দিয়েছেন ওড়িশার মুখ্যসচিবকে। ” লকডাউন লঙ্ঘন নয় কি এটি?  গ্রামবাসীদের ঘর ভেঙে দেয়া অমানবিক,  তারা এখন রোজগারহীন এবং বিকল্প থাকার জায়গাও নেই,” বলেছেন সামন্ত।

প্রফুল্ল সামন্তারা আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের সাথে যুক্ত। তিনি বলেছেন, প্রথমেই বলতে হয়, তাদের ঘর গুড়িয়ে দেয়ার জন্য এই সময় বেছে নেয়ার বিষয়টি পরিস্কার ইঙ্গীত করে যে এখন সবাই লকডাউনে আছেন, তাই কোনও প্রতিরোধ হবে না, এই বিষয়টি মনে রেখেই এখন এই কাজটি করা হল। যখন সারা বিশ্ব সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন এই মারন ভাইরাসকে আটকাতে, এই আদিবাসীদের বেঘর করা হল। এখন তাদের খাবার কিছু নেই, থাকার জায়গা নেই। মহুয়া পাতা খেয়ে আছেন তারা।  তাদের প্রতি এমন ব্যবহার কেন?

আগে তারা এখান থেকে  ১৫ কিলোমিটার দূরে থাকতেন  মাখাগুড়া গ্রামে। ২০১৭ সালে তাদের ঘর ধ্বসে গুড়িয়ে যায়। তাই তারা এখানে চলে আসেন। কোনওভাবেই তাদের থাকার জায়গা থেকে তুলে দেয়া যায় না। ফরেস্ট রাইটস অ্যাক্ট’র পরিপন্থী এটি। ২৪ এপ্রিল যখন কেউ ছিলেন না,  তখন আধিকারিকরা এসে তাদের ঘর গুড়িয়ে দিয়ে চলে গেলেন, সামন্তারা অভিযোগ করেছেন।

কালাহান্ডি জেলা আদালতে কাজ করেন আইনজীবী সিদ্ধার্থ নায়েক। সুপ্রিম কোর্টে তিনি আদিবাসী অধিকার নিয়ে আবেদনকারীও। তিনি মনে করেন, এটা পুরোপুরি একটা ষড়যন্ত্র। জায়গাটি এলিফ্যান্ট  স্যাঙচুয়ারির।  কাছাকাছি বেদান্ত বক্সাইট মাইনিং প্রজেক্ট। তারা প্রকল্পের এলাকা বাড়াতে চায়। এই আদিবাসীরা সেই কাজে বাধা,  ফলে তাদের ঘর গুড়িয়ে দেয়া হল। লকডাউনে এটি করা হয়েছে কারণ কেউ যাতে বাধা দিতে না আসেন। নায়েকের দাবী এরকমই।

নায়েক বলেছেন, আদিবাসীদের থেকে ফোন পেয়ে তিনি যখন দেখা যান। বন আধিকারিক এবং রক্ষীরা তার সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন, এবং গায়ে হাত দিয়েছেন। 
তিনিই বলেছেন, ২০১৭ থেকেই তাদের পুর্নবাসনের কথা চলছে, কিন্তু কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।  লকডাউনে এই রকম জোর করে তাদের তুলে দেয়া, তাদের বদমতলবের ইঙ্গিত দেয়।

ডিভিসনাল ফরেস্ট অফিসার ( ডিএফও)  টি অশোক কুমার আদিবাসীদের দোষ দিয়ে বলেছেন, তারা জোর করে জায়গা দখল করে ছিলেন। তাদের গ্রাম এখান থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে। আমরা তাদের বলেছি ফিরে যেতে,  লকডাউন পর্যন্ত সেখানে থাকতে। তারা কথা শোনেননি।

সিদ্ধার্থ নায়েক বলেছেন, ডিএফও পুরো মিথ্যা কথা বলছেন। তাকে মিথ্যা বলতে বলা হয়েছে। যদি বিষয় তাই হত, তবে একমাস তাদের থাকতে দেয়া হল কেন!  এবং আচমকাই তাদের ঘর গুড়িয়ে দেয়া হল।

ট্রাইবাল আর্মি মুখপাত্র যশ মেঘওয়াল বলেছেন, এই ডিএফও নতুন। তিনি বলেছেন, আসিবাসীরা জবরদখল করেও থাকেন, এটাই কি সময় তাদের তুলে দেয়ার? 
কানাঘুষায় শোনা যাচ্ছে,  পেছনে রয়েছে এক বহুজাতিক কোম্পানি। আমরা জানি না, তার সত্যতা কতটা।

খবরটি করেছে,  নিউজক্লিক ওয়েব পোর্টাল। দ্য প্লুরাল কলাম সেই খবর অনুবাদ করেছে।

COMMENTS