সুপ্রিম কোর্টে ‘১০৩২৩’ শিক্ষকদের চারটি এসএলপি’র শুনানি হল, রায় হয়নি। তাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলেন কপিল সিব্বলও।

সুপ্রিম কোর্টে ‘১০৩২৩’ শিক্ষকদের চারটি এসএলপি’র শুনানি হল, রায় হয়নি। তাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলেন কপিল সিব্বলও।ফাইল ছবি

সুপ্রিম কোর্টে ‘১০৩২৩’ শিক্ষকদের মোট চারটি স্পেশাল লিভ পিটিসন ( এসএলপি)’র শুনানি হয়েছে। রায় ঘোষণা হয়নি।

ত্রিপুরায় আদালতের রায়ে চাকরি গেছে হাজার হাজার শিক্ষকের। শেষ কয়েকবছর তারা ‘এড-হক’ শিক্ষক হিসেবে কাজ করছিলেন, সেই মেয়াদও ৩১ মার্চ ফুরিয়ে গেছে। তারা চাকরি ফিরে পাবার দাবিতে আদালতে গেছেন।  ত্রিপুরায় ‘১০৩২৩’ শিক্ষক তারা বলে পরিচিত। তাদের বিষয়টি হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে বিভিন্ন আবেদনের প্রেক্ষিতে বেশ কয়েকবার গেছে।

 

“মোটামুটি সবগুলি আবেদনেই বলা হয়েছে, তাদের চাকরি গেছে ত্রিপুরা সরকারের চাকরি নীতি আদালতে বাতিল হওয়ার ফলে। সেই চাকরি নীতি ২০০৩ সালের , এবং এই নীতিতে তারা ছাড়াও আরও অনেকেই চাকরিতে নিযুক্ত হয়েছেন। তারা চাকরিতেই আছেন, তারা যদি একই চাকরি নীতিতে নিযুক্ত হয়ে চাকরি করে যেতে পারেন, তবে যেন ‘১০৩২৩’ শিক্ষকরাও চাকরি করতে পারেন,” বলেছেন বিজয়কৃষ্ণ সাহা। তিনি এবং আরও তেরজন ছাঁটাই হওয়া শিক্ষক একটি আবেদন করেছেন।

শিক্ষক বিজয়কৃষ্ণ সাহা বলেছেন, “তাছাড়াও আরেকটি বিষয় আমরা আদালতে কাছে নিয়ে গেছি। একই প্রক্রিয়ায় আবেদন করে, ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন ২০১২ সালের শিক্ষকরা, তারাও চাকরিতে আছেন। আবার আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন, আমাদের চাকরি ঠিকভাবে হয়নি বলে যারা মামলা করেছিলেন, এমন ৩৭ জনও ২০১২ সালে চাকরি পেয়ে এখনও শিক্ষকতা করছেন। অথচ আমাদের চাকরি নেই । আমরা আমাদের চাকরিই ফিরে পেতে চাই, কাউকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করার জন্য আমরা আবেদন করিনি।“

 

অলক চক্রবর্তী, অজয় দেববর্মা এবং মানস ভৌমিক , এই তিন শিক্ষকও এসএলপি দাখিল করেছিলেন।

অলক চক্রবর্তীর পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন বিখ্যাত আইনজীবী কপিল সিব্বল। তিনি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, কংগ্রেস নেতা। একসময় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্বেও ছিলেন।

 

‘১০৩২৩’ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করেছিলেন জনৈক ত্ন্ময় নাথ। অন্যরাও যুক্ত হন।

ত্রিপুরা হাইকোর্ট সরকারের নিয়োগ নীতি খারিজ করে দিয়েছিল, এবং তাতেই এই শিক্ষকদের চাকরি সমস্যায় পড়ে। রাজ্য সরকার চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায়, সুপ্রিম কোর্টে সেই রায় বহাল থাকে।

 

সুপ্রিম কোর্টে  রাজ্য সরকারের উল্টোদিকে সলমন খুরশিদ দাঁড়িয়ে ছিলেন আইনজীবী হিসেবে।

 

‘১০৩২৩’ শিক্ষকদের বিষয়টি ত্রিপুরায় গত বিধানসভা নির্বাচনে একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

বিজেপি তখন তাদের সমস্যা আইনত সমাধানের কথা বলেছিল। বিজেপি নেতা ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা যেমন তাদের ‘ন্যায়’ দেবার কথা বলেছিলেন, তেমনি তাদের ভিশন ডকুমেন্টে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধানের কথা বলা হয়েছে।

শিক্ষকদের একটা অংশকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, ফিরে এসে তারা ধন্যবাদ জানিয়ে মিছিল করেছিলেন। তখন সংসদে সংশোধনী আনা হবে বলেও কথা শোনা গিয়েছিল।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে শিক্ষকদের কেউ কেউ রেল ‘লাইন অবরোধও করেছিলেন।

 

রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে বলেছে, এই শিক্ষকদের বিষয়ে কী করতে চায়।

রাজ্য সরকার তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে । সংবাদ মাধ্যমে সেই ঘোষণার সাথেই কিছু গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি শূন্যপদের উল্লেখও করেছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি চেয়েছে।

 

চাকরি হারিয়ে এই শিক্ষকদের অনেকেই সবজি বিক্রি, মাছ বিক্রি, রেগার কাজ করছেন বলেও সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েছে। এই  শিক্ষকরা প্রচুর আন্দোলনও করছেন গত কয়েকমাসে। আটক হয়েছেন, গ্রেফতার হয়েছেন, মামলা হয়েছে তাদের নামে। এক/দু’জন শিক্ষক আক্রান্ত হয়েছেন বলেও অভিযোগ।

 

‘১০৩২৩’ শিক্ষকদের পক্ষে যে কপিল সিব্বল সুপ্রিম কোর্টে দাঁড়াচ্ছেন, এই খবর দ্য প্লুরাল কলাম-ই করেছিল মাস দেড়েক আগে।ত্রিপুরা প্রদেশ  কংগ্রেস নেতা এবং আইনজীবী হরেকৃষ্ণ ভৌমিক এই খবর নিশ্চিত করেছিলেন।

 

‘১০৩২৩’ শিক্ষকদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন কপিল সিব্বালঃ হরেকৃষ্ণ

COMMENTS